চিকলী নিউজ : অসময়ের ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের নিম্নাঞ্চল। অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গত তিন দিন ধরে হাঁটুপানির নিচে পুরো সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চত্বর। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। সেইসঙ্গে সাপের উৎপাত বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন রোগী, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। এতে হাসপাতাল চত্বর জুড়ে জমে হাঁটুসমান পানি। রোববার বিকেল থেকে বৃষ্টি থামায় পানি কিছুটা কমলেও ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন না হয়ে উল্টো আশপাশের পানি এসে জমতে শুরু করে হাসপাতালের চত্বরে। এতে প্রায় তিনফুট পর্যন্ত স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের মূল ভবনসহ নতুন বিল্ডিং, স্টাফ কোয়ার্টার, মসজিদ, করোনা ইউনিটসহ পুরো হাসপাতাল এলাকা পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত যেতে পানি পেরিয়ে অতিকষ্টে চলাচল করছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। এতে নারী-শিশু ও বয়স্কদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে এই পথ পাড়ি দিতে রিকশা ভাড়া নিচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের মুশরত এলাকার আবুল হোসেন বলেন, এইলা কোনো কথা হইলো। দুই দিন ধরি হাসপাতালত আছু পানি ডিঙি যাবার আসি নাগিছে। এতবড় হাসপাতালের এ্যাইংকা দুরবস্থা। মানুষ কষ্ট করেছে। পানি বাইর করার কোনো চেষ্টাই নাই। তার উপর রাইতোত সাপ ঢোকেছে। কখন যে কাক কামড়ায় বলা মুশকিল। মশাও উৎপাত করেছে।’বিজ্ঞাপন
কোলের শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের গৃহিণী আরাফা বেগম বলেন, অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে এসে পানির কারণে আরেক ভোগান্তিতে পড়েছি। অটো থেকে নেমে দেখি গেটের পরই হাঁটুপানি। বাধ্য হয়ে রিকশা নিতে হলো জরুরি বিভাগে যেতে। এটুকুর জন্য অতিরিক্ত ৪০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অনেকে পানি পেরিয়ে যাচ্ছে। নোংরা পানিতে নামায় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হুদা বলেন, আমাদের এই হাসপাতালটি বেশ নীচু জায়গায়। সড়ক থেকে প্রায় ৩ ফুট নীচু হওয়ায় চারপাশের পানি এসে এখানে জমে। আর ড্রেন দিয়ে পানি বের হয়ে যে ভাগাড়ে পড়ে সেটা ভরাট হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানি প্রবাহও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেভাবে পানি জমেছে তাতে খুবই দুরাবস্থার মধ্যে পড়েছি। এই পানি নিষ্কাশন না হয়ে উল্টো ড্রেন দিয়ে বাইরের পানি ভেতরে ঢুকে পড়েছে। যা সহজে বের করে দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ নেই। রোগীরা বেশ কষ্ট করে আসছে। আমরা চেষ্টা করছি জরুরি বিভাগসহ ভর্তি রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে।
তিনি আরও বলেন, গত তিন দিনে সাপের উৎপাত বেড়েছে। ইতোমধ্যে ৯টি সাপ মারতে হয়েছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী হলে এই দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।