
নূর আলম সিদ্দিক,পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : দিনাজপুর পার্বতীপুরের মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের (বিএম) শাখার বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ গোলাম মোস্তফা একজন কুরুচিপূর্ণ বিতর্কিত স্বভাবের মানুষ। তিনি কলেজে পাঠদানের আড়ালে অত্র কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীদেরকে অনৈতিক দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাদের সাথে বিভিন্ন ধরণের অশালীন আচরণ করে থাকেন, যা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামকে ক্ষুণ্ণ করে। এ বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ৩০/০৪/২০২২ইং তারিখে মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিএম শাখার বৃষ্টি (ছদ্মনাম) কে অত্র কলেজের বিএম শাখার বাংলা বিষয়ের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা লাঞ্ছিত করেন। হেয় করেন শারীরিক ও মানসিকভাবে। এ বিষয়টি নিয়ে ঐ শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে সে গণমাধ্যমকে বিষয়টি খুলে বলে। সে জানায়,কলেজ শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সম্পর্কে আমার মামা হয় এবং আমি এসএসসি পাস করার পর তিনিই মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আমাকে এবং আমার পরিবারকে পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আমি এ কলেজে ভর্তি হই।
ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি আমাকে বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ব্যাপক উৎসাহ দেন। এমনকি কলেজ শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বাংলা বিষয়ের প্রভাষক হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে বলেন ,আমি তোমাকে সব বিষয়েই প্রাইভেট পড়াবো আমার বাসায়। আমি ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে চাইলে তিনি আমাকে নিরুৎসাহিত করে বলেন, তারা তো নিজেই ওই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না, আর তোমাকে কি পড়াবে ? তুমি বরং আমার কাছেই সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ো আমার বাসায়। এর কিছুদিন পর থেকেই তিনি কলেজে এবং প্রাইভেটে আমার সাথে ভিন্ন আচরণ করতে শুরু করেন; আমি বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আমার সাথে একের পর এক অনৈতিক ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এমনকি, মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা বলে তিনি প্রায় রাতে উদম শরীরে আমার সাথে কথা বলতে চান, আমাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার দেয়া অনৈতিক কুপ্রস্তাবকে প্রত্যাখান করি।

গত ৩০/০৪/ ২০২২ ইং তারিখে তার বাসায় প্রাইভেট পড়াকালীন সময়ে তার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তিনি আমার শরীরে হাত দেন এবং আমার সাথে অনৈতিক আচরণের চেষ্টা করেন ; আমি তার বাসা থেকে বইপত্র রেখে দৌড়ে পালিয়ে আসি এবং বাসায় গিয়ে আমার মাকে বিষয়টি খুলে বলি। তখন থেকেই ওনার সাথে আমি সর্বপ্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। পরবর্তীতে পরিবারের পরামর্শক্রমে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণে আমি মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ,সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেই।এছাড়াও আমার এই ঘটনার বিষয়টি নিয়ে একাত্মতা পোষণ করে আমার কলেজের সহপাঠীবৃন্দ মিলে আরো একটি লিখিত অভিযোগও দেয়া হয় অত্র কলেজের অধ্যক্ষ বরাবরে।
অভিযোগ করার পর তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে অভিযোগ উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন আমাকে বলেন যে,আমি রাজনৈতিক দল করি,আমার বিরুদ্ধে লাগতে গেলে আমিও তোমাকে ছাড় দিব না। যে কোন উপায়ে আমি এর খেসারত আদায় করব তোমার কাছ থেকে। এমনকি তোমার বিভিন্ন ছবি সংগ্রহ করে রংপুর থেকে এডিট করে এনে তোমার পার্বতীপুরের বাসার পাশে, রাস্তার দেয়ালে এবং মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজ সহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে এ-সব ছবির পোস্টারিং করাসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিব। আমার কাছে এ-সবের প্রমাণ সংরক্ষিত আছে। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপির সাথে নাকি তার হাত আছে, সেজন্য তিনি বিভিন্ন প্রকারের হুমকি স্বরুপ কথাবার্তাও বলেন।ফলে মানসিকভাবেও আমি বর্তমানে অসহায়ত্ব অনুভব করছি।উক্ত শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রভাষক গোলাম মোস্তফা ইতিপূর্বেও অনেক শিক্ষার্থীর সাথে বিভিন্নভাবে এরকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও এর আগে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে কলেজ ছাত্রীদের করা লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আমিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এর আগেও প্রভাষক গোলাম মোস্তফা আমার কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং আমার কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগও করেছেন অত্র কলেজের একাধিক ছাত্রী। তিনি প্রভাষক গোলাম মোস্তফার নানা অনিয়মের বিভিন্ন নথিপত্র তুলে ধরেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য ; কলেজের একজন শিক্ষক হয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ, অশালীন ভিডিও চ্যাটিং এবং ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদনে এ সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ০৬/০৭/ ২০২২ তারিখের কলেজ গভর্নিং বডির সভায় তাকে কলেজের প্রভাষক (বাংলা) পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।