চিকলী নিউজ ডেস্ক : জ্বরের সিরাপ খেয়ে নয়, পরকীয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে দুই শিশুকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছে মা লিমা বেগম। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এই ঘটনায় নিহতদের বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে ঝরনা বেগমসহ আরও দুজনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় লিমা বেগমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি করানোর জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছে।
মারা যাওয়া দুই শিশু হলো আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ দুর্গাপুরের একই রাইস মিলে কাজ করে শফিউল্লাহ ও লিমা বেগম। কিছুদিন আগে থেকেই তারা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। পরকীয়া প্রেমিককে বিয়ে করার ক্ষেত্রে দুই শিশুকে বাঁধা মনে করতেন তাঁরা। এরই জেরে মুরসালিন ও ইয়াসিনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন তাদের মা লিমা বেগম ও শফিউল্লাহ। তাঁর প্রেমিকের পরামর্শে তাঁর দেওয়া বিষ মিশানো মিষ্টি শিশুদের খাওয়ানো হয়। পরে ঘটনা আড়াল করার জন্য বাজার থেকে জ্বরের সিরাপ ‘নাপা’ কিনে এনে খাওয়ায় মুরসালিন ও ইয়াসিনকে। আশপাশের লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করে ‘নাপা’ সিরাপ খেয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারকৃত লিমা বেগম মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মুরসালিন ইয়াসিনকে খাইয়ে মেরে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া আদালতে তিনি ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন। তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এই ঘটনায় শফিউল্লাহ পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।
অভিযোগ ওঠে, ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে শিশু দুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে নিহতের মা ঝরনা বেগম ও অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গতকাল বুধবার রাতে মামলা দায়েরের পর রাতেই পুলিশ ঝরনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুর থেকেই মুরসালিন ও ইয়াসিনের জ্বর আসে। পরে সন্ধ্যায় তাদের বাবা ইসমাইল হোসেন স্থানীয় দুর্গাপুর বাজারের মা ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কিনে নিয়ে আসেন। রাত আটটা বাজে ইয়াসিন ও মুরসালিন কে একই বোতল থেকে সিরাপ খাওয়ানো হয়। সিরাপ খাওয়ানোর পর রাত সাড়ে আটটার দিকে দুজনের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফেরার পথে প্রথমে মুরসালিন ও কিছুক্ষণ পর ইয়াসিন মারা যায়।