
চিকলী নিউজ : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের পানিয়ালপুকুর গ্রামে শ্যালিকাকে অপহরনের পর হত্যা ও গোপনে দাফনের চেষ্টা মামলার পলাতক প্রধান আসামী শহিদ শাহসহ (৪০) অপর দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
র্যাব-১৩’র নীলফামারী ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-২ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আজ রবিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব-১৩’র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অপহরণের তিন মাস পর নীলফামারীর কিশোরঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের পানিয়ালপুকুর গ্রাম থেকে গোপনে দাফনের সময় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় পালিয়ে যায় ওই তরুণীর দুলাভাই শহীদ শাহ ও তার পরিবারের লোকজন।
নিহত ওই তরুণী একই উপজেলার কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের মুসা গ্রামের শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। মেয়েটির দুলাভাই শহীদ শাহ উপজেলার পানিয়ালপুকুর গ্রামের জাকারিয়া শাহর ছেলে জয়পুরহাট জেলায় কর্মরত একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি।
নিহত স্মৃতির পারিবারিক সূত্রে জানিয়েছে, শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ফারজানা সিরাজ স্মৃতির সাথে শহীদ শাহর বিয়ে হয়। তারা জয়পুরহাট জেলা শহরে থাকতো। তাদের সৌধ্য নামের সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
পারিবারিক কলহে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে স্মৃতি সন্তানসহ বাবার বাড়ি ফিরে আসে। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি শহীদ শাহ শ্যালিকা দিল আফরোজা সিরাজ সুলতানা ইতিকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ ওই সময় অভিযান চালিয়ে অপহৃতকে উদ্ধার ও অপহরণকারী দুলাভাই শহীদ শাহকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলায় ছয় মাস পর শহিদ শাহ আদালত থেকে জামিন পায়।
মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর শহীদ শাহ পুনরায় দিল আফরোজা সিরাজ সুলতানা ইতিকে অপহরণ করে গা-ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা কিশোরগঞ্জ থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও অপহৃতকে উদ্ধার অপহরনকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শহিদ শাহ ইতিকে নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে এবং এক পর্যায়ে সে গর্ভবতী হয়ে পরে। ইতিকে সে প্রায়ই নির্যাতন ও মারধর করত। গত ১৪ জানুয়ারি নির্যাতনের এক পর্যায়ে শহীদ শাহ অন্তঃস্বত্তা ইতির পেটে লাথি মারলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। এ ঘটনায় তার পিতা সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহিদ শাহ ওই দিনের ঘটনা সম্পূর্ণ বর্ণনা করে। গত ১৪ জানুয়ারি তরুনীকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে তার পেটে লাথি মারে। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে সে তরুনীকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যায। কিন্তু ততক্ষনে ইতি রক্তক্ষরণে মারা যায়। এক পর্যায়ে শহীদ শাহ মরদেহ নিয়ে তার কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে গোপনে দাফনের চেষ্টা করে।
র্যাব আরো জানায়, এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী শহিদ শাহ, আব্দুল করিম শাহ (৪৭) ও হেলাল মিয়া(৫৮) কিশোরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যান্য পলাতক আসামীদের আটক করতে গোপন অনুসন্ধান চলছে।