নীলফামারী (ডিমলা প্রতিনিধি) : সোনালী আঁশ পাটের অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসলেও সেই রেখেছে ডিমলা উপজেলার কৃষক। এ বছর পাটের আবাদ বেড়েছে গত বছরে পাটের দাম ভাল পাওয়ায়। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। বিভিন্ন ডোবা-নালা আর খাল-বিলে আঁটি বেঁধে বর্ষার পানিতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত পাট চাষিরা। নির্দিষ্ট সময়ে যারা পাটের বীজ বপন করেছিলেন, তারা অবশ্য পাট জাগ থেকে তুলে আঁশ ছাড়াতে শুরু করেছেন। পাট চাষি জানান, পাট রোপণ থেকে জাগ দেওয়া এবং ধোওয়া পর্যন্ত কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। মৌসুম অনুযায়ী বীজ রোপণ করলে বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদন হয় ৮ মণ। আবার অনেকেই ইরি ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর রোপণ করেন। তারাও পান বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ পাট। পাট বোনার ১শত দিনের মাথায় তা কাটার উপযোগী হয়ে ওঠে। পাট কেটে ডোবাতে আঁটি বেঁধে তা ১৫ থেকে ১৬ দিন পচনের জন্য রাখতে হয়। আঁটিগুলো পানিতে ডুবিয়ে তার ওপর কচুরি পানা দিতে হয়, যাতে সূর্যের আলো না পড়ে। ডোবার কিনারে বসে কৃষকেরা পচনধরা পাটের আঁটিগুলো থেকে আঁশগুলো ছড়িয়ে নিয়ে তা আবার পেঁচিয়ে রাখছেন। পাটের আঁশ শুকনোর পাশাপাশি তার পাটখড়িগুলোও শুকাচ্ছেন তারা। পাটের সঙ্গে ভাল দাম পাচ্ছেন তারা পাটখড়ির, এক মণ পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
গত বছর পাট চাষিরা প্রতি মণ পাটের দাম পেয়েছে ২৫ শত টাকা। বর্তমানে বাজারে দাম ২৮ শত থেকে ৩হাজার টাকা রয়েছে। কৃষকরা আশা করছেন এবছর পাটের দাম আরও ভাল পাবেন।
ডিমলা খগা খড়িবাড়ী ইউ.পি’র দোহলপাড়া গ্রামের শাহিনুর ইসলাম লাবু বলেন, পাট চাষে ভালো লাভ আছে, তবে বর্তমান পাট জাগ দেওয়ার জায়গার অভাব। আগের মতো আর পাট জাগ দেবার মতো ডোবা নালা নেই। কয়েকদিন থেকে বর্ষার পানি হচ্ছে, ছোট-খাট ডোবা নালাগুলো পানিতে ভরে গেছে। এখন এসব স্থানে পাট জাগ দিচ্ছি। ইরি ধান কাটা-মাড়াই করে পাট লাগিয়েছি, তাই পাট কাটতে এবং জাগ দিতে দেরি হয়েছে। তবুও আশা করছি বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ মণ পাট ঘরে তুলতে পারবো।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ সেকেন্দার আলী জানান আমরা সকল প্রকার ফসল উৎপাদনের লক্ষে কৃষকদের নানা পরামর্শ ও প্রনোদনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এবছর ডিমলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর পাট চাষ হয়েছিলো ৪২০ হেক্টর। তিনি আরও জানান রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ২০ বিঘা জমিতে রবি-১ জাত পাটের প্রদর্শনী করা হয়।এ বিষয় উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দরিবুল্লাহ সরকার বলেন-৩ হাজার পাটচাষীকে প্রনোদনা স্বরূপ ১২ কেজি করে সার ও ১ কেজি করে পাট বীজ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান আরও ৩ হাজার কৃষকের হালনাগাদের কাজ চলছে। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাঠে প্রায় সব পাট কাটা শেষ হয়েছে, পাট জাগ আর আঁশ ছাড়াতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে। আশা করছি পাট চাষিরা তাদের ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারবে।