চিকলী নিউজ : নীলফামারীর সৈয়দপুরে তুলশীরাম সড়কে অবস্থিত লাইসেন্সবিহীন মা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে বিগত চার মাসে মা ও শিশুর মৃত্যু অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে ধারাবাহিকভাবে মা এবং শিশুর মৃত্যু ঘটছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মা ও শিশুর মৃত্যু নেক্কারজনক কর্মকাণ্ড সর্বদাই লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নীলফামারীর সিভিল সার্জন মহোদয় ৩ মাস আগে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ প্রদান করলেও সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে নেই পর্যাপ্ত কোন পার্কিং সুবিধা, মেইন রোড সংলগ্ন ভবনটি কোনভাবেই হসপিটাল পরিচালনার জন্য উপযোগী নয়, এছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ চিকিৎসক ও নার্স বা স্টাফ ছাড়াই নামকাওয়াস্তে কয়েকজন চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করলেও ওই চিকিৎসকসমূহের এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, মাত্র একজন অনভিজ্ঞ ডিপ্লোমা নার্স দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলমান, স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে কোন প্রকার বাচ-বিচার বা মান নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিষ্ঠানটি অহরহ অপ্রয়োজনীয় অপারেশন করে চলছে।

বিস্তারিত খোঁজ খবরে আরো জানা যায় যে, অপারেশনের সহযোগী হিসেবে যে ডাক্তার এবং নার্সের নাম লেখা রয়েছে তারা আদৌ ওই দিন ওই অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
গত ০৪ মে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলাস্থ কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মত্তর তোকদার পাড়া নিবাসী মোঃ নুরুল ইসলাম এর স্ত্রী মুক্তা আক্তার নামক রোগীকে একই কায়দায় একইভাবে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। রোগীর স্বামী এবং ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানা যায় শুক্রবার সকাল ১১ টার সময় উক্ত রোগীকে ওই হসপিটালে জনৈক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর মাধ্যমে ভর্তি করা হলে রাত সাড়ে আটটার সময় অপারেশন করা হয়। অপারেশন পরবর্তীতে কিছুক্ষণ পর রোগীকে আবার অপারেশনের রুমে ঢুকিয়ে রাত সাড়ে বারোটার দিকে রোগীকে ওটি থেকে বের করা হয়। এরপরে ভোর পাঁচটার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ, উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিতে হবে বলে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়, আসলে রোগী তার অনেক আগেই মারা যায় বলে রোগীর লোকজন দাবি করেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার কারণেই ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি অথচ এসব প্রতারণার অভিযোগ যে সত্য, ২৫ এপ্রিল ভোক্তা অধিকার এর একটি মোবাইল কোর্টে তা প্রমাণিত হওয়ায় অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীদর মধ্যে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী মোঃ সজিব উদ্দিন নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন এবং সংশ্লিষ্ট সার্জন বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অপারেশনের রোগীদের নিজেই চিকিৎসা প্রদান করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই শহরেই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো কোন প্রকার ঝামলা ছাড়াই অত্যান্ত সুনামের সাথে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে। দু একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে এই শহরের স্বাস্থ্য খাতকে ঢালাওভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, কেননা মানুষের অন্তরে এইসব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একবার অবিশ্বাস জন্মালে তা ফিরে পাওয়া কষ্টসাধ্য এবং সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে একক ভাবে এই খাতে সেবা প্রদান কোন ভাবেই সম্ভব নয়, আস্থার সংকট এড়াতে ও আর নতুন কোন মায়ের বুক খালি হবার আগেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।