35.9 C
Saidpur

সত্য প্রকাশে সাহসী

শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

যেসব ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছিল বাংলাদেশ

চিকলী ডেস্ক নিউজ : গত তিন বছরে যে ঘুর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়েও সিত্রাংয়ের আঘাত হানার এলাকা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ ৮ নম্বর বুলেটিনে দেশের সমুদ্রবদরগুলোকে আগের ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সিত্রাংয়ের আঘাত হানার রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার ধারণা পাওয়া যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হানা দেওয়া তিনটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে। সেই ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ হিসেব অনুযায়ী  ২০২১ সালের ২৬ মে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। যার গতি বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। এর প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের।

এর আগে গত ২০২০ সালের ১৩ মে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হয় হয় ১২৮ জনের। সেই সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি।

একইভাবে গত ২০১৯ সালের ৩ মে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফনি। যার আর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের ৮৯ জনের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ ৩টি বড় ঘূর্ণিঝড়গুলোর তুলনায় সিত্রাংয়ের আঘাত হানার এলাকার বিস্তার আরও অনেক বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে করা হচ্ছে ৭৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সিত্রাং তার তাণ্ডব দেখাতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডরের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৮ এর ঘূর্ণিঝড়। এটি যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়।

পরের ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। এটি মূলত চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড ও এর আশপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। 

এরপর আসে ঘূর্ণিঝড় সিডর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ছয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। যদিও প্রাণহানির সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয় এখনও। সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তাণ্ডব চালায়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সব কিছু ভেসে যায়। 

এরপর আসে ঘূর্ণিঝড় আইলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূলে ২০০৯ ‍সালে ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের ১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপকূলে প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়।

পরের ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এটির বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এই ঝড় বাংলাদেশে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।

ঘূর্ণিঝড় কোমেন ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু যা ২০১৬ সালে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক অঞ্চলে আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা ২০১৭ সালের ৩০ মে ১৪৬ কিলোমিটার বাতাসের গতিতে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী ২০১৯ ‍সালের ৩ মে আঘাত হানে। বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে নয় জনের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বারবার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে। পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়। ঝড়ে মারা যায় ২৪ জন। 

এর পরে গত ২০২০ সালের ১৩ মে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হয় হয় ১২৮ জনের। সেই সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। পরে ২০২১ সালের ২৬ মে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। যার গতি বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার এর প্রভাবে এসে বাংলাদেশেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এই ঘূর্ণিঝড়।

এদিকে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ ৮ নম্বর বুলেটিনে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে আগের ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান সই করা ওই বুলেটিনে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। 

ঘূর্ণিঝড়টি আজ (২৪ অক্টোবর) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিমি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিমি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিমি. দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

গতকাল (২৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সিত্রাং নিয়ে আমরা যে ম্যাপিং করেছি তাতে উপকূলীয় ৭৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে সিত্রাং। এ কথা বলা যায় গত ৩ বছরে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এই সিত্রাংয়ের কভারেজ এরিয়া বা আঘাত হানার এলাকার পরিমাণ বেশি।

- Advertisement -spot_img

আরও খবর

আপনার মন্তব্য:

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

- Advertisement -spot_img

সদ্যপ্রাপ্ত

জাতীয়