চিকলী নিউজ : নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিভিন্ন কসমেটিকস দোকানে অসাধু ব্যবসায়ীরা নামি-দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী বিক্রি করছেন। মোড়ক দেখে কারও বোঝার সাধ্য নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল। ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি এসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে দিন দিন এ উপজেলায় বাড়ছে চর্মরোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে কোমল ত্বকে এসব নকল প্রসাধনী ব্যবহারের শিশুদের বেশি ক্ষতি হচ্ছ। একই সঙ্গে বেশি দামে পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এমন অভিযোগ কয়েকজন ভুক্তভোগীর।
ভুক্তভোগীরা বলেন, বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নামি-দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার নকল প্রসাধনী তৈরি বিক্রি করে আসছেন। প্রশাসন সব জেনেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারীর উপ-সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, জনবল সংকটের কারণে সবসময় সবদিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে ভেজাল প্রসাধনী যেসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে খুব শিগগিরি সেসব দোকানে অভিযান চালানো হবে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জানান এ কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রসাধনী পণ্যের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই নকল ও ভেজাল। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা এটা খুলে ব্যবহার করেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই যে এটা নকল পণ্য। বাজারে জনপ্রিয় প্রসাধনী পণ্য নকল করে বাজারে ছাড়ছে একটি চক্র। এসব নকল পণ্য আমদানি করে ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে বিভিন্ন কসমেটিকসের মোড়কে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে বাজারে ছাড়ছে চক্রটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরেরর বিভিন্ন দোকানে ও ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে। নকল হওয়ায় অনেক সময় দরকষাকষি করে সাধারণ দোকানগুলোতে নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে বেশ কম দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বিপণীবিতান কেন্দ্র সৈয়দপুর প্লাজার একটি প্রসাধনীর দোকানে কথা হয় মিথিলা পারভীনের সঙ্গে। পেশায় গৃহিণী এই নারী বলেন,‘ দামি একটি ব্রান্ডের একটি বডি স্প্রে কিনেছি। এটির গায়ে ২৬০ টাকা মূল্য লেখা থাকলেও আমার কাছ থেকে দোকানি ২১০ টাকা নিয়েছে। কম দামে পেয়েছি তাই এখান থেকেই কিনলাম। পণ্য নকল না আসল এটা বোঝার তো উপায় নেই।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকোনের কর্মচারী বলেন, কাস্টমার ধরে রাখতে হলে একটু ছাড় দিয়েই বিক্রি করতে হয়। এটা ব্যবসায়িক কৌশল। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লস কেন হবে। কেনার সময় আমরাও তো কিছু ছাড় পাই। তবে নামিদামি ব্র্যান্ডের কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, আসল প্রসাধনী কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলেমুল বাশার জানান, উপজেলায় চর্মরোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বহিরদবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে আসেন।
রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রেজাউল করিমের কাছে এসব পণ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, নকল পণ্য ব্যবহার শারীরের জন্য ক্ষতিকর। পণ্যের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল কতটুকু তার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যঝুঁকি মাত্রা। নকল লোশন, স্নো বা স্কিনের যে কোনো কসমেটিকস ব্যবহারে চর্মরোগ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নকল পণ্য ব্যবহারে চুলপড়া, চোখের সমস্যা, মুখ ফুলে যাওয়া, শরীরে ঘা, হাঁপানি রোগসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। নকল পণ্য ব্যবহার, খাবারে ফরমালিনের কারণে দিন দিন চর্মরোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান জানান এ চিকিৎসক।