29.6 C
Saidpur

সত্য প্রকাশে সাহসী

শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

সৈয়দপুরে চামড়ার দরপতনে বিপাকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা

চিকলী নিউজ : গত বছরের মতো এবারেও কোরবানির চামড়ার দরপতনে চরম বিপাকে পড়েছে নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এবারের সংগৃহিত চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আগামী বছরে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নিয়ে রীতিমতো চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।

সূত্রমতে, গত রবিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ দিবসটিতে সামর্থ্যমান মানুষেরা সাধ্যমতো পশু কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানির পর পশুর চামড়া এতিমখানা কিংবা কওমি মাদ্রাসাগুলোতে দান করে থাকেন। সংগৃহিত চামড়া বিক্রির অর্থে এসব দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের তিনবেলা খাবারের জোগান আসে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে কোরবানির চামড়ার মূল্য নেই একেবারে। মেলেনি ক্রেতা। তাই চরমভাবে দরপতনে পানির দামে বিক্রি হয়েছে চামড়া। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। তাই এবারে কোরবানির চামড়ার দাম না থাকায় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সঙ্গে জড়িতরা মারাত্মক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এবারে কোরবানিতে পাওয়া চামড়া পানির দরে বিক্রি করে যে অর্থ মিলেছে তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবস্থানকারী দ্বীনি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের এক মাসেরও খাবার সংকুলান হবে না।

জেলার সৈয়দপুর শহরের কাজীপাড়ায় অবস্থিত আল-জামিআ’তুল আরাবিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা আবুল কালাম কাদেরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বিগত ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত  মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচশত আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এবারে কোরবানিতে মাদ্রাসা ফান্ডে সাড়ে ৪শত পিস গরু এবং দুইশত পিস ছাগলের চামড়া পাওয়া গেছে। গরুর চামড়াগুলো ছোট-বড় মিলে গড়ে প্রতিটি ৫২৫ টাকা দরে এক চামড়া ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তবে ছাগলের চামড়াগুলো কোন চামড়া ব্যবসায়ী নিতে আগ্রহ দেখায়নি। অবশেষে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, কোরবানির চামড়া বিক্রির অর্থে মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থীদের এক দেড় মাস পর্যন্ত তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। বছরের বাকি কয়েক মাস কিভাবে চলবে তা দিয়ে চরম দুঃচিন্তায় আছি। মহতামিম মাওলানা আবুল কালাম কাসেমী বলেন, কওমি ও লিল্লাহবোর্ডিং মাদ্রাসাগুলো আয়ের সব চেয়ে বড় উৎস হচ্ছে কোরবানির চামড়া। কিন্তু গত ২/৩ বছর ধরে কোরবানির চামড়া দরপতন ঘটেছে। তাই আমরা লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো পরিচালনায় মারাত্মক হিমশিম খাচ্ছি। আর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড ভাতা দেয়া হয় তা একেবারে অপর্যাপ্ত।

এ শহরের আরেকটি ঐহিত্যবাহী ও প্রাচীনতম মাদ্রাসা হচ্ছে আল- জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম ইসলাম মাদ্রাসা। এর পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ হারুন রেয়াজী জানান, ১৯২৬ সালে স্থাপিত মাদ্রাসাটিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেন। আর প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এলাকার মানুষ স্বহস্তে এ মাদ্রাসায় কয়েশ শ’ চামড়া দান করেন। আর ওই চামড়া বিক্রির টাকায় মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থীদের বছরের প্রায় অর্ধেক সময় তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু গত ২/৩ বছর ধরে চামড়ার মূল্য না পাওয়ার কারণে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবার দিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।

তিনি জানান, এবারে কোরবানি ঈদে মাদ্রাসার ফান্ডে ৪৭২ পিস গরুর চামড়া এবং ২৫১ পিস ছাগলের চাপড়া মিলেছে। সব চামড়া সম্পূর্ণ বাকিতে চামড়া ব্যবসায়ীকে অনেকটাই জোর করে দেওয়া হয়। তারা চামড়াগুলো লবন দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে রাখবেন। পববর্তীতে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রির পর আমাদের মূল্য পরিশোধ কবরেন।

সৈয়দপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজুল হক জানান, আমরা বংশ পরস্পরায় চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। লাভ লোকসান হলেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রয়েছি। জানি না আর কতদিন এভাবে লোকসান দিয়ে এ পেশা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবো। ট্যানারি মালিকদের কাছে মোটা অংকের বকেয়া পড়ে রয়েছে। বছরের পর বছর তারা বকেয়া পরিশোধ করছেন না। তারপরও আবার ঋন ধার করে চামড়া কিনেছি। তিনি জানান, বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করা হলেও প্রক্রিয়াকরণ করতেই একটি ছাগলের চামড়ায় ৩০ -৪০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। তাই আমরা এবারে ছাগলের চামড়া কেনায় তেমন একটা আগ্রহ দেখাইনি। এছাড়াও এখন চামড়া প্রক্রিয়া কাজের শ্রমিকদের মজুরী ও লবনের দামও অনেক বেশি।

- Advertisement -spot_img

আরও খবর

আপনার মন্তব্য:

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

- Advertisement -spot_img

সদ্যপ্রাপ্ত

জাতীয়