
সাদ্দাম হোসেন (নীলফামারী) : ২০০৫ সালে সম্মেলনের পর দীর্ঘ ১৬ বছরেও সম্মেলন করতে পারেনি নীলফামারী জেলা যুবলীগ। ফলে একদিকে যেমন সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবীর হয়েছে অন্যদিকে দীর্ঘ সময়ে একই কমিটি থাকায় তৈরি হয়নি নতুন নেতৃত্ব। তবে সম্প্রতি সম্মেলনের ঘোষনা আসায় প্রান চাঞ্চল্য ফিরেছে নেতা-কর্মীদের মাঝে।মূল নেতৃত্বে আসতে দৌড় ঝঁপ শুরু করেছেন এক ডজনেরও বেশী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
সভাপতি হতে অন্তত ছয়জন এবং সাধারণ সম্পাদক হতে ১৬জন জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন কেন্দ্রে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ ছাড়াও সভাপতি হিসেবে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তানভীর হাফিজ।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদেক তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফি সবুজ, জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক শাহ আনোয়ার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম জীবন ও নোহেল রানা জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছেন কেন্দ্রে।
জেলা যুবলীগ সুত্র জানায়, ২০০৫সালের ৫জুন সবশেষ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো নীলফামারী শিল্পকলায়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল। তৎকালিন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এতে প্রধান বক্তা ছিলেন।
সম্মেলনে এ্যাডভোকেট রামেন্দ্র বর্ধণ বাপ্পী সভাপতি ও শাহিদ মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭১সদস্যের এই জেলা কমিটি অনুমোদন হয় ২০০৮সালে। এরপর আর কোন সম্মেলন হয়নি।
জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, জেলা সম্মেলন কেন্দ্রীয় ভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে এক্ষেত্রে বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির অনাগ্রহের কারনেই সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রে নতুন দায়িত্ব আসায় বর্তমান নেতারা সম্মেলন এবং সাংগঠনিক ভাবে দলকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করছেন।
জেলা যুবলীগের সভাপতি হতে আগ্রহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক জানান, নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি, কতটা সফল ছিলাম তা নেতা কর্মী এবং কেন্দ্র মুল্যায়ন করবে। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী করে তুলবো। জেলা যুবলীগে সভাপতি হিসেবে আগ্রহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তানভীর হাফিজ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের সাবেকরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। শুণ্যতায় ভুগছেন। তাদের জায়গা প্রয়োজন।
আমি সভাপতি হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। যদি দায়িত্ব পাই তাহলে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবো, তবে সংগঠনকে গতিশীল করতে যে পদেই দেয়া হোক না কেন আমি আদর্শচ্যুত হবো না।
আরেক সভাপতি প্রত্যাশী বর্তমান জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম বাবু জানান, আমি এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই।নীলফামারী যখন জেলা হয় সে সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করি। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছি। সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম জীবন বলেন, নিয়মিত সম্মেলন হলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। জায়গা পূরণ হয় কিন্তু সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। যেটা হয়েছে যুবলীগে। আমি মনে করি যুবলীগে যোগ্য ও ত্যাগীরা মুল্যায়ন পাবেন। তবে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি ঠিকই কিন্তু সাংগঠনিক ভাবে যুবলীগ সফল।দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি কর্মসুচী সফলভাবে পালন করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোন গ্রুপিং বা বিভক্তি নেই। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমিও চাই দ্রুত সম্মেলন হোক। সামনে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে হয়তো জেলা সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী যুবলীগের রংপুর বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ জানান, নীলফামারীতে সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বর্ধিত সভা করা হয়েছে। বিরোধী দলে থাকাকালে সে সময়ে দলের জন্য অবদান আমরা অবশ্যই মুল্যায়ন করবো। দলে যারা একনিষ্ঠ, যোগ্য-ত্যাগী এবং যারা অভিমানে চুপ করে রয়েছেন তাদেরও মুল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহীদের বায়োডাটা জমা নেয়া হয়েছে কেন্দ্রে। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে।