26.3 C
Saidpur

সত্য প্রকাশে সাহসী

রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

পরিবার হারিয়ে ভারসাম্যহীন, ৩২ বছর পর বৃদ্ধকে সন্তানদের কাছে ফেরালেন পোস্টম্যান

ডোমার : ঠিকানা অনুযায়ী চিঠি পৌঁছে দেওয়াই পোস্টম্যানের কাজ। কিন্তু এবার নির্দিষ্ট ঠিকানায় হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দিলেন এক পোস্টম্যান। ৩২ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলেন নীলফামারীর ডোমার পোস্ট অফিসের বোড়াগাড়ি শাখার পোস্টম্যান হোসেন আলী।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাবা-ছেলের আবেগঘন মিলনের সময় পোস্টম্যান হোসেন আলীর প্রশংসা করেছেন এলাকাবাসী। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তি পিরোজপুর জেলার ৩ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের মোক্তাদের আলী মাঝির (মৃত) ছেলে জিয়াউল হক (৬২)।

পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের ডোমার উপজেলায় টাইপিস্ট পদে চাকরি পান মো. জিয়াউল হক। প্রায় সাড়ে পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চাকরি না করার অনুরোধ করেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই চাকরি ছাড়তে চাননি। এক পর্যায়ে তাঁদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে জিয়াউল হকের আর কোনো খোঁজ পায় না পরিবার।

পরিবার হারিয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে চাকরিটাও চলে যায় জিয়াউলের। সেটি প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। চাকরি ফেরত পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাফেরা করেও লাভ হয়নি। এরপর মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। একসময় ভিক্ষা করা শুরু করেন। সেই টাকা দুই মেয়ে (৪ ও ৬) ও এক ছেলেকে পাঠাতে থাকেন। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে দুতিন শ টাকা করে ৪০ থেকে ৫০টি মানি অর্ডার করেন। মানি অর্ডারের কারণ না জানায় কোনো কর্মকর্তা সেটি গ্রহণ করেননি। ফলে বারবার সেই টাকা ফেরত যায় ডোমারে। এ জন্য তিনি প্রতিদিন ডোমার পোস্ট অফিসে যাতায়াত করতেন। 

বৃহস্পতিবার মানি অর্ডারের মোট সাড়ে ৮ হাজার টাকা জিয়াউলকে বুঝিয়ে দেয় ডোমারের পোস্ট অফিস। 

পোস্টম্যান হোসেন আলী বলেন, ‘জিয়াউল হক চাচা ডোমার পোস্ট অফিসে প্রায়ই এসে মানি অর্ডার করতেন। কেউ গ্রহণ না করায় সেই টাকা ফেরত চলে আসত। তিনি প্রতিদিন পোস্ট অফিসে এসে খোঁজ নিতেন তাঁর পরিবারের কেউ টাকা পেয়েছে কি না। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে পোস্ট অফিসে যাতায়াত করেন। আমি কয়েক দিন আগে তাঁর ঠিকানা নিয়ে পিরোজপুরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দিই। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এরপর সৌরভ নামে পিরোজপুরের এক পোস্টম্যানের সহায়তায় তাঁর পরিবারকে খুঁজে পাই। অবশেষে তাঁর ছেলে ডোমারে এসে তাঁকে নিয়ে যায়।’ 

জিয়াউল হকের ছেলে সহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, ‘আমার যখন দেড় বছর বয়স তখন বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। বাবা ডোমার চলে আসেন। আমার বড় দুই বোন ও আমি নানার বাড়িতে থাকি। আর তখন থেকেই বাবার কোনো খোঁজ পাই নাই। বুধবার সকালে যখন ডোমার পোস্ট অফিস থেকে হোসেন ভাই ফোন করে বলেন, আপনার বাবা ডোমারে আছেন, তাঁকে নিয়ে যান! তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। সাথে সাথে আমরা রওনা হই। জীবনে প্রথম আজ বাবাকে দেখলাম ও জড়িয়ে ধরলাম। এ রকম শান্তি আর কখনো পাই নাই।’ 

আবেগাপ্লুত জিয়াউল হক কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, ‘৩২ বছর ধরে ছেলেমেয়েদের খুঁজে চলছি। আজ তাদের পেলাম। খুব ভালো লাগছে। যে চাকরির জন্য পরিবার-পরিজন হারিয়েছি। আজ সেই চাকরিটাও নেই। সরকারের কাছে আমার চাকরিটা ফেরত দেওয়ার দাবি করছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রোহেল উত্তল ও মামুন ইসলাম বলেন, এ লোককে আমরা দীর্ঘদিন ধরে পোস্ট অফিসে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। মাঝেমধ্যে আমরা তাঁকে খাবার কিনে দিতাম। এখন তিনি তাঁর পরিবার খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা আরও বলেন, পোস্টম্যান হোসেন আলী তাঁর পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও এ মহৎ কাজের জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।

- Advertisement -spot_img

আরও খবর

আপনার মন্তব্য:

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

- Advertisement -spot_img

সদ্যপ্রাপ্ত

জাতীয়