চিকলী নিউজ : নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মেয়ে সাদিয়া নাবিলা অভিনীত সিনেমায়ও দর্শকের খরা চলছে। যদিও অনেক প্রত্যাশা বহুল প্রতীক্ষিত ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর প্রথম পর্ব ছবিটি প্রদর্শণের জন্য এনেছিলেন শহরের তামান্না সিনেমা হল মালিকপক্ষ। কিন্তু তাতেও হলমুখী হয়নি আশানুরূপ দর্শক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর জনপদের নীলফামারীর বাণিজ্য প্রধান ও শ্রমিক অধ্যূষিত উপজেলা শহর সৈয়দপুর। এক সময় এ শহরটিতে বিজলী টকিজ, লিবার্টি, গ্যারিসন, তামান্নাসহ চারটি সিনেমা হল ছিল। আর এসব সিনেমা হলের প্রতিটি ‘শো’ পরিপূর্ণ থাকতো দর্শকে। শহরের মানুষ ছাড়াও প্রত্যন্ত পল্লীর সব বয়সী মানুষ সিনেমা দেখতে ভীড় করতো সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমা হলে প্রবেশের টিকিট সংগ্রহে দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলতো। সিনেমা হলগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সপ্তাহের প্রতিটি দিনই জমজমাট থাকতো সিনেমা হলগুলো। দর্শকদের চাহিদার কারণে অনেক বাংলা ছায়াছবি মাসের পর মাস চলতো শহরের সিনেমা হলগুলোতে। তারপরও দর্শকদের কোন কমতি ছিল না। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই।
বর্তমানে ভাল জীবনকাহিনী ও মানসম্পন্ন বাংলা ছায়াছবি সংকট, কেবল টিভি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, আকাশ সংস্কৃতি, দেশীয় একাধিক টিভি চ্যানেল, ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনেক সিরিয়াল প্রচারিত হওয়ায় মানুষ সিনেমা হলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব নানাবিধ কারণে মানুষ আর সিনেমা হলমুখী হচ্ছেন না। ফলে দর্শকদের অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দুই হাজার সালের পর থেকে সৈয়দপুরে সিনেমা হল ব্যবসায় ধস নামে।
সৈয়দপুর শহরের চারটি সিনেমা হলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। শহরের অভিজাত সিনেমা হল ছিল ‘বিজলী টকিজ’। ওই সিনেমা হলটিতে “ছুটির ঘন্টা” ছায়াছবিটি কয়েক মাস ধরে চলে। তারপরও দর্শকদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তব চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শক সংকটে বিজলী টকিজ এখন বন্ধ। সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধিক সুপার মার্কেট ‘চৌধুরী টাওয়ার’। একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ সুপার মার্কেট। আর সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
বর্তমানে ‘নীল ধন সবে মনি’ হয়ে আছে একমাত্র শহরের শের-এ-বাংলা সড়কের তামান্না সিনেমা হল। বর্তমানে এটি ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছেন জনৈক মোশারিফ হোসেন আকাশ। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল ব্যবসায় জড়িত তার পরিবার। শুক্রবার তামান্না সিনেমা হল চত্বরে সিনেমা ব্যবসার বর্তমান অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল সিনেমা হল। পরবর্তীতে চালু করা হলেও সিনেমা হলে তেমন আশানুরূপ দর্শক আসেনি।
তিনি জানান, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সৈয়দপুর শহরের মেয়ে অভিনয় শিল্পী সাদিয়া নাবিলা অভিনীত বহুল প্রতীক্ষিত বাংলা ছবি ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর প্রথম পর্ব নিয়ে আসা হয়েছে। সারাদেশের ৫০টি সিনেমা হলে (প্রেক্ষাগৃহ) একযোগে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ফয়সাল আহমেদ ও সানী সানোয়ার ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন। আর এতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, তাসকিন রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, সাদিয়া নাবিলা ও সুমিত সেনগুপ্ত ছাড়াও অনেকে।
তিনি আরো জানান, অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে সাদিয়া নাবিলা সৈয়দপুর শহরে মেয়ে। তাকে নিয়ে অনেক প্রচার প্রচারণা করা হয়। কিন্তুু তাতেও সাড়া মেলেনি। দর্শক ফিরেনি সিনেমা হলে। তিনি জানান, প্রতি মাসে সিনেমা হল ভাড়া, কাস্টমস্ ভ্যাট, পৌর কর, কর্মচারী, বিদ্যূৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কি আর হল ব্যবসায় করা সম্ভব।
তামান্না সিনেমা হলের পরিচালক মাহবুব আলী ঝন্টু বলেন, শুক্রবার মর্নিং শোতে দর্শক ছিল মাত্র ২৪ জন। দুই শ্রেণির টিকিট বিক্রি করে আয় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৬০ টাকা। আর বিকেলের শো’তে ৫৬ জন। এতে এসেছে মাত্র তিন হাজার ১৫০ টাকা।
তিনি আরো জানান ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর প্রথম পর্ব ছায়াছবির জন্য নির্মাতা সংস্থাকে অগ্রিম ৬০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই অগ্রিম অর্থ আয় হওয়ার পর পরবর্তীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ টাকার টিকিট বিক্রি হবে তা থেকে অর্ধেক পাবে ছবিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আর অর্ধেক পাবেন হল মালিক এ শর্তে ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।
সৈয়দপুরের সংস্কৃতিকর্মী শেখ রোবায়েতুর রহমান রোবায়েত বলেন, সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবেন সে অবস্থা আর এখন কি আছে? এখনকার বাংলা চলচ্চিত্রগুলোতে কোন ভাল কাহিনী নেই। শুধু অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ। তৈরি হচ্ছে না মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ ও কাহিনী নির্ভর ছবিও। তাছাড়া এখন সিনেমায় যে ধরনের অশ্লীলতা পরিপূর্ণ। সে সব আর তো পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে এক সঙ্গে দেখা সম্ভব হয় না। ফলে মানুষ সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদিয়া নাবিলার বেড়ে উঠা শহরের নয়াটোলায়। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নের সময় ২০১৩ সালে শিক্ষা ভিসায় পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নৃত্য শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ক্যানবেরা বলিউড ড্যান্স স্কুলে।