26.3 C
Saidpur

সত্য প্রকাশে সাহসী

রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

রেইনট্রি মামলা: কেড়ে নেওয়া হল সেই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা

চিকলী ডেস্ক নিউজ : সেই সঙ্গে ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এই বিচারককে রোববার সকাল থেকে আর আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রোববার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

সেখানে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।“তার বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে অদ্য ৯টা ৩০ ঘটিকায় আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।”

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষে বৃহস্পতিবার সব আসামির খালাসের রায় দেন ঢাকার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এই বিচারক।তার সঙ্গে ধর্ষণ প্রমাণে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতার যুক্তি দিয়ে ওই সময়ের পর মামলা না নিতে পর্যবেক্ষণ দেন তিনি।

এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই শনিবার বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “একটি কথা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি উনার (বিচারক) রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না।

“কিন্তু উনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক।”তিনি বলেন, “বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেজন্য আগামীকাল (রোববার) প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি লিখছি।”

ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় গিয়ে একটি মামলা করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, এক মাসের বেশি সময় আগে ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে তাকে এবং আরেক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হওয়ার সময় সাফাত আহমেদদের হাস্যোজ্জ্বল মুখই বলে দিচ্ছে তিনি খালাস পেয়েছেন। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের আলোচিত মামলাটিতে তিনিসহ সব আসামিই খালাস পেয়েছেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভিওই তরুণীর মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ। এছাড়া সাফাতের দুই বন্ধু এবং দেহরক্ষী ও গাড়িচালককেও আসামি করা হয়।

তবে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল শুধু সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে। বাকিদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল সহযোগিতার অভিযোগ।চার বছর পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রায় দেন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। তাতে তিনি অভিযোগ ‘প্রমাণিত হয়নি’ সিদ্ধান্ত দিয়ে সব আসামিকে খালাস দেন।

তিনি বলেন, অভিযোগকারী তরুণী ‘স্বেচ্ছায়’ রেইনট্রি হোটেলে গিয়ে আসামির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, সেখানে ‘ধর্ষণ ঘটেনি’। তদন্ত কর্মকর্তা ‘প্রভাবিত হয়ে’ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।  

ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা না হলে পুলিশকে ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়ে পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, “৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।”

রায় হচ্ছে কোনো একটি মামলায় দণ্ড বা সাজার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত। আর রায়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ওই মামলা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অভিমত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ; যা বিচারক প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারেন। নিম্ন আদালতের রায়ের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণও উচ্চ আদালত বাতিল করতে পারে।

বিচারকের ওই পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনাই শুধু নয়, সংবিধানের লঙ্ঘন বলে মনে মত দেন অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা। রায়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক নারী। 

সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের পাশাপাশি গৃহ, কর্মস্থল, গণপরিবহনে নারীর জন্যে নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।ওই ধারায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে কথা বলার যে সুযোগ রাখা হয়েছে আইনজীবীদের জন্য। অর্থাৎ, আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে এই যুক্তি দেখাতে পারেন যে, অভিযোগকারী সাধারণভাবে ‘দুশ্চরিত্রা’, ধর্ষণের শিকার নন।

ওই ধারা সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন অধিকারকর্মীরা। গত ৩০ জুন আইনমনন্ত্রী আনিসুল হকও আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে পরে তা আর এগোয়নি।

- Advertisement -spot_img

আরও খবর

আপনার মন্তব্য:

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

- Advertisement -spot_img

সদ্যপ্রাপ্ত

জাতীয়