করোনাকালে ব্যবসা বন্ধ থাকায় নীলফামারীর সৈয়দপুরের শুঁটকি আড়তে প্রায় এক শ টন শুঁটকি মাছ পচে গেছে। অবিক্রীত এসব শুঁটকি এখন মাছের খাদ্য হিসেবেও ক্রয় করছে না ব্যবসায়ীরা। আড়তে বেচাকেনা শুরু হলেও পুঁজির সংকটে ভুগছে দেশের অন্যতম এই শুঁটকি আড়তের ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের সূত্রমতে, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুরে গড়ে উঠে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শুঁটকির আড়ত। এখানে পুঁটি, শৈল, গজার, বাইম, টেংরা, বোয়ালসহ বিভিন্ন শুঁটকি খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা ও নাটোর থেকে মূলত এসব শুঁটকি আমদানি করে এখানকার ব্যবসায়ীরা। এ আড়ত থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রপ্তানি করা হয়।
আড়তের ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, করোনা সংকটের ১৭ মাসের পুরো সময়টায় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল আড়তের দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সে সময় বেকার হয়ে পড়ে এখানে কাজ করা প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। করোনার প্রভাবে লকডাউন ঘোষণায় সংরক্ষণে তদারকির লোক সংকটে গুদামে গুদামে মজুত থাকা শুঁটকি পচে যায়। সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা থাকলে ব্যবসায়ীদের এমন বড় ধরনের ক্ষতি হতো না।
নিয়ামতপুর শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বাছেদ আলী জানান, করোনায় ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৮০ ভাগ কর্মচারীরা পেশা বদল করেছে। নতুন কর্মচারী দিয়ে শুঁটকির ব্যবসা পরিচালনা করা খুবই কষ্টসাধ্য।
বাছেদ আলী আরও জানান, এখানে শুঁটকি মজুত করার জন্য সে ধরনের হিমাগার নেই। তাই মজুতকৃত শুঁটকি রক্ষা করতে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।
সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দর আড়তদার সমিতির সভাপতি রুহুল আলম জানান, দেশি-বিদেশি শুঁটকি সংগ্রহ করে বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতেন আড়তের এসব আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী। এ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে শত শত টন পুঁটি মাছের শুঁটকি ভারতে রপ্তানি হতো এই আড়ত থেকে। এ বছরে ১০-১২ কোটি টাকার প্রায় এক শ টন শুঁটকি পচে গেছে। পচে যাওয়া এসব শুঁটকি দুই কোটি টাকায় পশুখাদ্য হিসাবেও কেউ কিনছে না।
সৈয়দপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানি খান মজলিশ জানান, শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে বরেন্দ্র এলাকায় হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শুঁটকি আড়ত সৈয়দপুরে। সে জন্য এখানকার ব্যবসায়ী ও ব্যবসা সংক্রান্ত সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে হিমাগারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে।